স্কয়ারের পৃষ্টপোষকতায় পাবনার চিকনাই নদীতে পক্ষকালব্যাপি নৌকা বাইচের উদ্বোধন : ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মুখরিত চিকনাই পাড়

আবদুল জব্বার, পাবনা :
বৈঠা ও পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মুখরিত চিকনাই নদীর দু‘পাড়। বাইছাল এবং হাজারো দর্শণার্থীদের ভীড়ে যেন এক অন্য রকম পরিবেশ। করোনার পরে মানুষ যেন দম ফেলার সুযোগ পেয়েছে। এ রকম দৃশ্য পাবনার আটঘরিয়া এবং চাটমোহর উপেজলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাচীন চিকনাই নদীতে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে স্কয়ারের পৃষ্টপোষকতায় পাবনার চিকনাই নদীতে পক্ষকালব্যাপি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযেগিতা শুরু হয়েছে। রং, বে-রঙের বাহারি নৌকা নিয়ে বাইছালরা এই বাইচে অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার সন্ধ্যায় চিকনাই নদীর মাঝখানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। এ সময় নদীর দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষ নৌকা বাইচ উপভোগ করেন।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আগামীতেও এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে বলে জানান আয়োজকরা। চিকনাই নদীতে সকাল থেকেই বাদ্যের তালে তালে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে জড়ো হতে থাকে ছোট বড় সব বাহারি নৌকা। বিকেলে পর শুরু হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। নদীর পানিতে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে বাইচালদের বৈঠায় এগিয়ে চলে পানসি, কোষা, ডিঙ্গি আর ছিপ নৌকা।
আর গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন নদী তীরে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার দর্শক। করতালি দিয়ে প্রতিযোগিদের উৎসাহ প্রদান করেন তারা।
পাবনা মোটর মালিক গ্রুপ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব, পাবনা পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, পাবনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মো. সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি আব্দুল মতীন খান, সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শহীদ, পাবনা রির্পোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহকুক মোর্শেদ বাবলা, পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লু, পাবনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পাবনা জেলা যুবলীগের আহবায়ক মো. আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি, আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শিবলী সাদিক, শাকিরুল ইসলাম রনি প্রমুখ। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ছাড়াও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা এক দর্শনার্থী আবুল কালাম আজাদ বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, গ্রামীণ নানা খেলাধুলা তো হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেকদিন পর গ্রামীণ জনপদের এই বাইচ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটু আনন্দের ছোঁয়া পেলাম। আনন্দের এই খেলা বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিবছর এ আয়োজন অব্যাহত রাখা দরকার। আর নদীতে বিপুল দর্শকের সমাগমে নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করতে পেয়ে খুশি বাইছালরাও।
শের এ বাংলা নৌকার বাইচে অংশ নেয়া জৈমুদ্দিন নামের এক বাইছাল বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, আমরা আজকেও চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। যেখানেই নৌকা বাইচ হয় সেখানে আমরা অংশগ্রহণ করি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখাতে প্রতি বছর এ প্রতিযোগিতা আয়োজনের দাবি দর্শনার্থীদের।
আয়োজক আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, সারাদিন যে নৌকা বাইচ হলো তা মানুষ আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেছে। আমি যতদিন আছি ততদিন চেষ্টা করব প্রতিবছর এটা অব্যহত রাখার।
পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, মোবাইলের যুগে এ সব প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। এ গুলোকে ধরে রাখতে হবে।
স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, নৌকা বাইচ এখন বাঙালী জাতির ঐতিহ্যের অংশ। মহান স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকা। তাই নৌকা বাইচকে আরও জনপ্রিয় করতে স্কয়ার গ্রুপ সব সময় পাশে থাকবে। ১৫ দিন ব্যাপী চলা এই প্রতিযোগিতায় পাবনা সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০টি বাইচের নৌকা অংশ গ্রহণ করবে।