চাটমোহরে গাছীরা খেজুরের পাটালী গুড় তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন

ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর
পাবনার চাটমোহরে গাছীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেজুরের রস থেকে তারা প্রতিদিন তৈরী করছেন পাটালী গুড়। গাছ থেকে রসের হাড়ি নামানো, জ¦াল করে গুর তৈরী করা, গাছে রসের হাড়ি বাধা, জ্বালানী সংগ্রহ করা এসকল কাজে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাদের। চাটমোহরের গাছীদের পাশাপাশি নাটোর, রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার গাছীরা শীত মৌসুমে চাটমোহরে এসে গৃহস্থের গাছ ইজারা নিয়ে গুর তৈরীর কাজ করে থাকেন।
খেজুরের রসে তাপ দিয়ে ঘন ও শক্ত পাটালি গুড় তৈরী করা হয়। খেজুরের রস থেকে ঝোলা গুড়, দানা গুড়, পাটালি গুড় ও চিটা গুড় তৈরী করা হলেও ভোজন রসিকরা শীতকালে পিঠে পায়েস তৈরীতে পাটালি গুড়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাই শীতের পিঠে পায়েসের সাথে পাটালি গুড় শব্দ দুটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
পাবনার চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের কুমারগাড়া গ্রামে অবস্থান করে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বলিহার শহীদপুর গ্রামের ময়নুল,মনিরুল ও মকবুল যৌথ ভাবে খেজুর গাছের পরিচর্যা, রস সংগ্রহ ও পাটালী গুড় তৈরীর কাজ করছেন। ময়নুল জানান, তারা প্রত্যেকেই প্রায় পনেরো বছর যাবত পাটালী গুড় তৈরীর কাজ করেন। চাটমোহরে আট বছর যাবত পাটালী গুড় তৈরী করে আসছেন। কুমারগাড়া গ্রামের আবুল হোসেন মাস্টারের বাড়িতে থেকে তারা এ কাজ করছেন। ৩০ জন গৃহস্থের ২৫০ টি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তারা। পালাক্রমে প্রতিদিন ১শ ২০ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। এক একজন ৪০ টি করে গাছ প্রস্তত করে রসের হাড়ি বাঁধতে পারেন। দুপুর থেকে প্রায় ৪ টা পর্যন্ত গাছে রসের হাড়ি বাঁধেন। এর পর রাত প্রায় সাতটা পর্যন্ত জ্বালানী সংগ্রহের কাজ করেন। ভোড় ৩ টায় ঘুম থেকে উঠে ব্যস্ত হয়ে পরেন রস সংগ্রহে। সকাল ৬ টার দিকে রস ছেঁকে জ্বাল করার জন্য চারে (বড় পাত্রে) তুলে দেন। তিন ঘন্টা জ্বাল করার পর রস গুড়ের লাল রঙ ধারণ করে। এসময় রসের ঘনত্ব বেড়ে যায়। চারের এক পাশ অপেক্ষাকৃত নিচু করলে লাল ঘন রস চারের এক পাশে চলে যায়। উঁচু পাশটায় জমে থাকা যৎসামান্য ঘন গুড় বাঁশের কাঠি দিয়ে কয়েক মিনিট ঘষে তৈরী করেন গুড়ের বীজ। এর পর তা মিশিয়ে দেন সমস্ত লাল রসে। আবার কয়েক মিনিট নেড়ে গুড়ের ঘনত্ব বাড়ান। এসময় গুড় বেশ ঘন হয়ে আসে। এ ঘন তরল গুড় বিভিন্ন সাইজের সাচে ঢেলে তৈরী করেন পাটালী গুড়। বর্তমান প্রতিদিন প্রায় ৩০০ লিটার রস পাচ্ছেন। গড়ে প্রতিদিন ৫০ কেজি গুড় পাচ্ছেন তারা। পূর্ণ মৌসুমে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৪শ ৫০ লিটার রস পান। সেসময় গুড়ের পরিমান ও বাড়ে। বর্তমান প্রতি কেজি পাটালী গুড় পাইকারী ১১০ টাকায় ও খুচরা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, “কার্তিক মাসে খেজুর গাছ পরিষ্কার করা এবং রস সংগ্রহের উপযোগি করার কাজ শুরু করি। অগ্রহায়নের প্রথম থেকে শুরু হয় রস সংগ্রহ। মধ্য ফাল্গুন পর্যন্ত চলে রস সংগ্রহের কাজ। গাছের মালিকদের প্রতিটি গাছের জন্য বছরে ২ থেকে ৩ কেজি করে গুড় দিতে হয়। জ্বালানীর দাম বেড়েছে। অনুষাঙ্গিক অন্যান্য জিনিষের দাম ও বেড়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের শ্রমিকের মজুরী হিসেবে প্রতি দিন ৪ থেকে ৫শ টাকা থেকে যায়।
খেজুরের পাটালী গুড় প্রসঙ্গে ডাঃ রুহুল কুদ্দুস ডলার জানান, গুড় হজমে সহায়তা করা এনজাইমের শক্তি বাড়ায়, আয়রনের ঘাটতি কমাতে পারে, শরীরে হরমোনের সমতা বজায় রাখে, শরীর গরম রাখতে সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত গুড় খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে, রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে গুড় তৈরী না করলে তাতে জীবাণু সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে এবং সদ্য তৈরী গুড় খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।