চাটমোহরের সড়ক পথে সেতু-কালভার্ট আছে খাল নেই

চাটমোহর প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সড়ক পথে সেতু-কালভার্ট আছে কিন্তু খাল নেই। একের পর এক খাল ভরাট হওয়ায় সেতু-কালভার্ট গুলো দৃশ্যমান থাকলেও খাল গুলো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ফলে সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে পানি যাতায়াত করতে পারছেনা। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু গুলো নির্মিত হলেও সেগুলো কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে।
একসময় পাবনা-বাঘাবাড়ি সড়কের চাটমোহর অংশ, চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কসহ অন্যান্য কিছু সড়কের দুপাশে বেশ কিছু খাল ছিল। যাতায়াতের সুবিধার কারণে, সড়ক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে সরকার বিভিন্ন সময়ে খাল গুলোর উপর সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করেন। কিন্তু সেতুর বা কালভার্টের দুই পাশের জমির মালিকরা তাদের জমি ভরাট করে ফেলায় সেতু-কালভার্ট দাড়িয়ে থাকলেও খালগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পরেছে। চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কের খালগুলোর অনেকাংশ দখল করে ভরাট করেছেন স্থানীয়রা। এতে পানির স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা-বাঘাবাড়ি সড়কের চাটমোহর অংশে উথুলী, হারানমোড় এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে সেতুর দুপাশের জমির মালিকগন তাদের জমি ভরাট করে ফেলায় সেতু তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারিয়েছে। চাটমোহর হাসপাতাল গেট থেকে ছাইকোলা অভিমুখি সড়কের ধানকুনিয়া, কাটেঙ্গা ও ছাইকোলা এলাকায় গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। কালভার্ট গুলো মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। সেতু-কালভার্ট গুলোর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কের ধানকুনিয়া থেকে ছাইকোলার দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। এ ছয় কিলোমিটার এলাকার গ্রাম গুলোর পূর্ব পাশে গুমানী নদী এবং পশ্চিমে কয়েকটি বিল। নদীর সাথে বিলের সংযোগ খাল গুলো দিয়ে অতীতে বিলে বর্ষার পানি প্রবেশ করতো এবং বর্ষা শেষে পানি বড়িয়ে যেত। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে মাটি ফেলে সব গুলো খাল ভরাট করা হয়েছে। পশ্চিম পাশের বিল গুলোর পানি নিয়ন্ত্রনের জন্য বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়িয়া ও চরসেনগ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কিনু সরকারের জোলায় (খালে) একটি স্লুইজ গেট নির্মিত হয়েছে। গুমানী নদীর সাথে বিলের সংযোগ খাল গুলো ভরাট করে ফেলার পরও খাল গুলোর উপরে অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মিত হয়েছে। সড়কটির এ অংশের কোন খালই এখন সচল নেই। এ ছাড়া আরো কিছু সড়কের সেতু সংলগ্ন খাল ভরাট করে ফেলছেন জমির মালিক পক্ষ।
কাটাখালী গ্রামের ইশারত আলী জানান, নাটোরের জোনাইলের সোন্দভা এলাকা থেকে বড়াল নদীর একটি খাল কাটাখালী-বাঙ্গাল্লা হয়ে চিকনাই নদীতে পরেছে। এ খালের প্রায় পুরোটাই বিভিন্ন পন্থায় অসাধুরা দখল করে ভরাট করে ফেলেছে। কাটাখালী বাজারের পূর্ব অংশে এ খালের উপর একটি সেতু নির্মিত হয়েছিল অনেক পূর্বে। সেতুটি এখনও দাঁড়িয়ে থাকলেও দুপাশ ভরাট করায় অস্তিত্ব হীন হয়ে পরেছে খালটি।
খাল ভরাটের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে চলনবিল রক্ষা আন্দোলন ও বড়াল নদী রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এস. এম মিজানুর রহমান জানান, অননুমোদিত খাল ভরাটের অধিকার কারো নেই। এ গুলো দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। প্রশাসন অনেক সময়ই দেখে না। প্রশাসনের অবহেলার কারণে ব্যক্তি স্বার্থ চারিতার্থে জমির মালিকগন বা এলাকাবাসী খাল ভরাট করছেন। পরিবেশের উপর এর বিরুপ প্রভাব পরছে। বন্যার পানি সুষম ভাবে বন্টিত হচ্ছে না। কোন কোন এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রোডস এন্ড হাইওয়ে পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী পাবনা-বাঘাবাড়ি সড়কের চাটমোহর অংশের খালের সম্মুখ ভাগ ভরাট করা প্রসঙ্গে জানান, আমরা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে কাজ করি। অনেক সময়ই বিভিন্ন অনৈতিক পন্থায় কেউ কেউ কালভার্ট বা সেতুর সম্মুখ ভাগ ভরাট করেন। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কের কালভার্ট প্রসঙ্গে তিনি জানান, খাল গুলোর বাঁধ সরকার যদি কখনো অপসারণ করে তবে তবে তো আবার পানির চলাচল শুরু হবে। দূরবর্তী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই উক্ত স্থান গুলোতে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।