প্রধান সূচি

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি. পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের ৬০ জন বাসিন্দা এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন। মনোয়ার হোসেন খান গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের পদবিধারী কোন নেতা নয়।

তবে সিরাজগঞ্জের প্রয়াত সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মির্জার ভাগিনা হওয়ায় তিনি এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে ইজিপিপি কর্মসূচির নন-ওয়েজ প্রকল্পে মহিষবাতান গ্রামে পুনর্নির্মিত একটি রাস্তায় কালভার্ট নির্মাণ না করে ৯৬ হাজার ৯৬৮ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ে ময়দানদিঘী বাজার হতে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত একটি রাস্তায় নামমাত্র কাজ করে তিন লাখ টাকা বিল তুলেছেন। টিয়ার তৃতীয় পর্যায়ে মাদারবাড়িয়া বাজার হতে কালিয়ানজিরি বাজার পর্যন্ত একটি রাস্তার কাজ না করে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা তুলেছেন এই চেয়ারম্যান। কাবিটা দ্বিতীয় পর্যায়ে নগদ টাকার প্রকল্পে বৃদ্ধমরিচ গ্রামে ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকার একটি প্রকল্পে আংশিক টাকা ও গ্রামের মসজিদ ফান্ডের ৬০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করেছেন।

এলজিএসপি কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়নের দুধবাড়িয়া মাদ্রাসায় চার লাখ তের হাজার টাকার প্রকল্পে অর্ধেক টাকার কাজ করে পুরো বিল তুলে নেয়া হয়েছে। চন্ডিপুর গ্রামে এডিপি প্রকল্পের একটি সড়কে এইচবিবি কাজ না করেই টাকা তোলা হয়। ভিজিএফ সহ বিভিন্ন মানবিক সহায়তা কর্মসূচি থেকে অন্তত ৪ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগও করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে। এছাড়া গ্রাম্য আদালতের সালিশি ফি, ওয়ারিশ সনদ ও জন্ম মৃত্যু সনদ তুলতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা ইউনিয়ন পরিষদে আদায় করা হয় বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট অফিস উন্নয়ন কাজের অনেক প্রকল্পের অর্থ ছাড় করে অর্থবছরের শেষের দিকে। এঅবস্থায় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন প্রকল্পের পিআইসিকে শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু এ বছর জুন মাসেই আগাম বন্যা চলে আসে। তাই চলনবিল অধ্যুষিত ও বন্যাকবলিত খানমরিচ ইউনিয়নে একাধিক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। তবে প্রকল্পের টাকা ৩০ জুনের মধ্যে উত্তোলন করে নেয় সংশ্লিষ্ট পিআইসি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বন্যার পানি নেমে গেলে সেই কাজ করা হয়। যদিও প্রকল্পের কাজ শেষ না করে এই টাকা তোলার কোনো বিধান নেই। এই সুযোগে কেউ কেউ নামমাত্র কাজ করে প্রকল্প ধামাচাপা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগেও একাধিক প্রকল্পের কাজ না করে বিল তোলার সত্যতা পাওয়া যায়।

অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান বলেন, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আগাম বন্যার কারণে দুয়েকটি প্রকল্পে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তাই বন্যার পানি নেমে গেলেই কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিপক্ষ লিখিত অভিযোগ করে আমাকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রাপ্তি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন কর্মসূচির চাল বিতরণ করা হয়। আর কোনো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করে বিল ছাড় করা হয় না। এরপরেও অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।